হতাশা থেকে মুক্তির উপায় । গল্প নয় বাস্তব। বাস্তব গল্পের প্রথম পর্ব না পড়লে বুজতে একটু কঠিন হতে পারে। হতাশার জার্নি প্রখর ভাবে অনুভব করলাম। স্বামীর ঘরে এসে।স্বপ্ন ছিল আমি মানুষিক সাপোর্ট পাবো। কাজ একা করতে একটু কষ্ট হবে।
ব্যাপারনা ,আমি ম্যানেজ করে নিবো।কিন্তু বাস্তবতা হলো। তাঁর একটা চাকরি আছে।
ওখানে ৮/১০ ঘন্টা সময় দেয় বলে। ঘরে খাবার আসে। একটা বাসায় ঘুমাতে পারি। আমি চলতে থাকি অনেক আত্মবিশ্বাসে।
কিন্তু ধীরে ধীরে সেটা দুর্বল হতে থাকে। সকালে সে একটু দেরিতে অফিস যায়। তখন আমি ঘরের কাজ গুছিয়ে নেই।
কিন্তু তার বিনিময়ে অফিসে দ্বিগুন সময় তাকে দিতে হয়।তার মানে হলো কোনোদিন রাত ১০:৩০ আগে ফিরতে পারে না।
নিজের দিকে তাঁকানো:
আমি হটাৎ নিজেকে খেয়াল করলাম। কতদিন ভালোভাবে গোছল করিনা। মাথা শেম্পু করি না। চুল গুলি অনেক ভারী হয়ে গেছে।
কারন শ্যাম্পু করবেন তখন বাথরুমে তো একটু বেশি সময় থাকতে হয়। আমি এই সময় টুকু পেতাম না। কতদিন আয়নার সামনে দাঁড়াইনা।
রাতে ক্লিনজিং ,ব্রাশিং না করে ঘুম পারতাম না।কিন্তু মনে হয় শব্দ দুইটা আমি ভুলেই গেছি।
বাবু শুধু আমাকে কাছে পেতে চাইতো। যখন ঘুমতো তখন যদি পাশে থাকি তাহলে দীর্ঘ সময় ঘুমাতো। অর্থাৎ ৪/৫ ঘন্টা অনায়াসে।
আমি পাশে না থাকলে এক ঘন্টা পার করা খুব কঠিন।
কাজ কাজ কাজ:
ঘরের কাজ গুছিয়ে নিতে আমার ৩/৪ ঘন্টা লাগে। কিন্তু আমি সেই কাজ গুলি সারাদিন শেষ করতে পারতাম না।
রাত ২টার আগে আমি ঘুমাতে যেতে পারতাম না। বাবু বিরক্ত করতো কথাটা বললে ভুল হবে। সে শুধু আমাকে কাছে পেতে চাইতো ।
দৌড়ের উপর থাকতাম ওর হিসু আর পায়খানা পরিষ্কার করতে। আমাকে বাবু দশ মিনিট সময় দিতো না।
আমিও চরম শান্তি পেতাম তাকে বুকে নিয়ে থাকতে। কিন্তু মাথার মধ্যে শুধু ঘুরতো বাসার কাজ। সিঙ্কে থালাবাসন পড়ে আছে।
বাথরুমে বালতিতে কাপড় আছে। দুপুরে খেতে আসবে উনি।
বোঝাপড়া:
ভাবলাম বিষয়টা নিয়ে কথা বলি। স্বামীর কাছে সমাধান একটাই পেলাম। একটা কাজের লোক রাখো। আমি অনেক হিসেব করে দেখলাম।
সারাদিনের জন্য লোক পাওয়া যায় না। ছুটা বুয়া কাজ করবে। প্রতি কাজ ৬০০ টাকা। সে তো কাপড় ধুয়ে চলে যাবে।অথবা ঘর মুছে চলে যাবে।
খুব বেশি হলে ১০/১৫ মিনিট। মধ্যবিত্ত পরিবারের বউ আমি। তাই টাকা খরচ কোথায় হোলো।
আমার আদৌ কোনো উপকার হোলো কিনা তা হিসেব নিকাশ করেই চলতে হয়।
হিসেব নিকাশ:
আমি অংক কষে দেখলাম। ফলাফল শূন্য আসে। কারন ১০/১৫ মিনিটের হেল্প দিয়ে আমার কিছু হবে না। আমি মাঝে মাঝে খুব ক্লান্ত থাকি।
একটু রেস্ট নিতে চাই। খাবার টা কেউ আমাকে থালায় দিবে। কেউ একটু মানুষিক শান্তনা দিবে।
অর্থাৎ সব সময়ের জন্য একজন পরম বিশ্বস্ত, নিশ্চিন্তে নির্ভর করা যায় এমন কাউকে লাগবে ।
স্বামী ছাড়া কাউকে চোখে , মনে পড়লো না। আলোচনা করলাম বিষয়টা নিয়ে। অনুরোধ ছিল আমি ম্যানেজ করে নিবো। তুমি একটু তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরো।
সে বুজলো। কিন্তু যেদিন বলি সেদিন আসে তাড়াতাড়ি। পরের দিন আরো দেরি। আবার বলি। কিন্তু যেই লাউ সেই কদু।
সবার আদর ভালোবাসা আর যত্ন আমাকে হতাশেই করেছে। সবাই আমার শারীরিক যত্ন নিয়েছে। মানুসিক ভাবে আমি অনেক ভেঙে গিয়েছিলাম।
সেই ভাঙা জায়গা টা কেউ দেখে নি।বার বার ভাবতে শিখিয়েছে আমি অসহায়। সবার সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তা আমাকে গ্রাস করেছিল।
বার বার মনে হয়েছিল। আমাকে তারা মোটেও ভালোবাসে না।
একটা মেয়ে যখন মা হয়। তখন শারীরিক সাপোর্ট এর সাথে সাথে মানুসিক সাপোর্ট খুব দরকার। মানুসিক ভাবে কোনো মা যদি ভালো থাকে ,
তাহলে তার পক্ষে অনেক অনেক কঠিন কাজ করা খুবি সহজ ব্যাপার। এইজন্য পরিবারের প্রত্যেক মানুষ এর সাহায্য খুব দরকার।
শরীরের কষ্ট সহ্য করা সহজ , মনের কষ্টের সাথে লড়াই করার থেকে।
তৃতীয় পর্ব
[…] দ্বিতীয় পর্ব […]
[…] এই জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছি ? প্রথম আর দ্বিতীয় পর্বে যা বলেছি তা , সম্পূর্ণ ছিল […]