হতাশা থেকে মুক্তির উপায় । লিখতে বেশ স্বাচ্ছন্দ লাগছে ।কারন , এইটা নিজে স্বাদ গ্রহণ করছি । আবার নিজেই সেই স্বাদ পরিবর্তন করছি ।
গল্পটা হলো , আমি যখন প্রথম মা হলাম।আমার হতাশা প্রখর হলো , সন্তান জন্মদানের পর। যাই হোক , এই হতাশা বা এই সময়টাকে বলা হয় পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন বা বেবি ব্লুজ ।
পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের কাকে বলে ?
সন্তান যখন গর্ভে থাকে, তখন থেকেই আশেপাশের মানুষের পরামর্শ। আর শুভাকাংক্ষিতায় মেয়েটি নিজেকে ভুলে যেতে শুরু করে।
বারবারই মনে হয়, আমি মনে হয় আমার ১০০% দিতে পারছি না।
আমি মনে হয় ভালো মা হতে পারব না। আমি তো কিছুই জানি না।আমি ছাড়া সবাই বাচ্চার ভালো বোঝে।
হরমোনের পরিবর্তন আর শারীরিক কারণে ধীরে ধীরে এই মন খারাপ ভাবটা ডিপ্রেশনে রূপান্তরিত হতে শুরু করে। এই সময়টাকে বলা হয় পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন বা বেবি ব্লুজ।
আমি আমার অভিজ্ঞতা বলি। সন্তান জন্মের পর শুধু চেয়েছিলাম তার দিকে।আমি ওর কোনো সেবা করতে পারি নাই।
কারন শারীরিক ভাবে আমি অক্ষম ছিলাম। নিজেই শুয়ে বসে ছিলাম ক্লিনিকের বেডে।ভাবছেন অসুস্থ ? না , স্বাভাবিক নিয়মের মধ্যেই কেটেছে চার দিন।
কিন্তু আমি খুব অস্থির ছিলাম ওকে কোলে নিয়ে আদর যত্ন করার জন্য। আমার বড় আপা নির্ঘুম চার রাত কাটালো।বাবুকে বুকে নিয়ে। আমি চাইনি কেউ কিছু করুক বাবুর জন্য। জানি এইটা আবেগের কথা।তবুও ভেবেছি এইটা। কারন হলো বুঝিয়ে বলা আমার হতাশা কোথা থেকে এসেছে।
চার দিন পর যখন বাসায় আসলাম। আমার কাছে মনে হয়েছিল একটা যুদ্ধ।
প্রতিনিয়ত কানে বাজতো
“আহা বাবু কাঁদে কেন ,নিশ্চই বুকের দুধ পায় না , পাবে কিভাবে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে ”
“নাকটা বোচা কেন , সব সময় টানবে তাহলে লম্বা হবে ”
“এখন শুয়ে আছো কেন ,যাও বাইরে হাটা চলা করো ”
“বাইরে কেন যাও ঘরে যাও বাতাস লাগবে ”
“তুমি যদি একটু সাহস করতে , তাহলে তোমার বেবি নরমালি হইতো ছিজার লাগতো না ”
“এতো ছোট বাবু তোমার তাও আবার নরমাল হলো না। অমুকে তো ৪ কেজি বাচ্ছা জন্ম দিছে ”
“কপালে সবসময় একটা কালো কাজলের টিপ দিয়ে রাখবা, মানুষের নজর লাগে কিন্তু! আর শোন মায়ের নজর সবচেয়ে বেশি লাগে, বাচ্চার মুখের দিকে অমন করে তাকিয়ে থাকবা না তো!”
“শোন, প্রতিদিন নিজে ১ লিটার করে দুধ খাবা, ঘি খাবা।
ওজন বাড়লো না কি হলো এইসব নিয়ে চিন্তা করতে যাবা না. বাচ্চা কিন্তু নাইলে ঠিক মতো বুকের দুধ পাবে না!”
গল্পটা এইখান থেকেই
প্রথম সন্তান জন্মের সময় সাধারণত , মেয়েরা বাপের বাড়ি থাকে। আমিও এর ব্যতিক্রম ছিলাম না। কিন্তু, এমন কিছু সময় বা মুহূর্ত গেছে।যখন প্রচন্ড অনুভব করছি স্বামীকে।
মনে হয়েছে, ওই থাকলে এই কথাটা বলতে পারতাম। অথবা ওর কাছে সাহায্য চাইতাম। আমাকে দেখা ছাড়াও, মায়ের সংসারের কাজ করতে হতো।
তাই কখনোই ডাকতাম না।উঠে বসলে কষ্ট হতো। বাবু কে কোলে নিতে প্রায়ই কাটা জায়গায় আঘাত পেতাম।
অকারনে বাবু হটাৎ কাঁদতো।তখন আমার মনে হতো ,কেউ আমাকে কলিজায় আঘাত করছে। ঠিক সেই সময় আমাকে শুনতে হতো। কি করলি ? আজও ভালো ভাবে কোলে নিতে পারলি না। কোথাও লেগেছে নাকি ?
ক্ষুদা মিটতেছে না মনে হয়। বুকের দুধ ঠিক মতো পায় না। অৰ্থাৎ আমি অপরাধী। আমি যদি এইসব লিখতে যাই তাহলে শেষ হবে না।
কারন এমন আরো হাজার কথা শুনতে হয়েছে প্রতিদিন। দিনে কয়েকবার। এমন করে কেটেছে মাসের পর মাস।
একবার ভাবুন আমি একটা মানুষ। প্রত্যেকটা কথা ছিল এমন যে ,নিজেকে অপরাধী ভাবতে বাধ্য করে।সন্তান কালো কিংবা ফর্সা ,পাতলা অথবা মোটা। যেমনি হোক কথা একটাই আমার দোষ।
আমার ভেঙে পড়া:
বিষয়টা একবার ভাবুন। আমি শারীরিক ভাবে এখনো ক্লান্ত। সন্তান যখন কাঁদে তখন মায়ের থেকে কষ্ট অন্য কারো লাগার কথা নয়।
তার মানে হলো , ওই সময় আমি মানুষিক ভাবেও ক্লান্ত। ঠিক ওই মুহূর্তে আমাকেই বার বার বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে আমি অপরাধী।
আমি আনাড়ি।মা হিসাবে আমি মোটেও পারফেক্ট নই। আমি নতুন মা হয়েছি। তাই এই সময় আমি প্রচন্ড ভাবে ফিল করছিলাম পরিবারের মানুষিক সাপোর্ট। শারীরিক যত্নের সাথে মানুষিক যত্ন খুব দরকার।উল্টা আমাকে প্রতি মুহূর্তে অপরাধী বানানো হচ্ছে। আমি ধীরে ধীরে ভেঙে যাই ভিতর থেকে।
বাড়ির সবাই আমাকে অনেক আদর করলো। কিন্তু, যে জায়গাটা শূন্য পড়ে থাকল তা কেউ দেখলো না। আমি কাউকে খুব মিস করতাম ।
যার সাথে একটু কথা বলবো। শরীরে কোথাও লাগছে , একটু উঃ আহঃ করে শোনাবো ।
ভাবছেন , মাকেতো বলা যেত। মা আমার সেবা করছে। নিজের সংসারে কাজ করছে। রাতে আমার সাথেই ঘুমাতো।
কিন্তু বাবু সেই ভোর বেলা উঠে যেত। বাবু অনেক বেশি হিসু করতো ।
মাকে ডাকতে মন চাইতো না। আবার কোনো কাজের লোকও রাখতে পারি না। মা নিজেকে অপরাধী ভাবে। বলে আমি কি সেবা করতে পারছি না ?
হতাশা প্রকট ভাবে শুরু যে চিন্তা থেকে
আমি ভীষণ ভাবে স্বামীকে মিস করি। ভাবি সেতো বাবা হয়েছে। আমার মতো সেও উৎকণ্ঠা আর অস্থিরতা থাকবে। আমি একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাবো। মাঝে মাঝে বলবো আমার কষ্ট গুলি।
সে আমাকে আশস্থ করবে। যা চিন্তা করলাম তাই করলাম। নদীর এপার বলে ওপারে সুখ। বুজতে পারিনাই।
বাবুর বয়স যখন চল্লিশ দিন পূর্ণ হলো। আমি ঢাকা চলে আসি। আমার স্বামী একরকম বাধ্য হয়েছিল।
কারন সে আমাকে বলেছিলো। এখানে তুমি একা কিভাবে কি করবা। আরো কিছু দিন থাকো।
আমি ভিতর থেকে শূন্য হয়ে গেছি। সেগুলি বলতে পারি নাই।
[…] থেকে মুক্তির গল্পের প্রথম পর্ব না পড়লে বুজতে একটু কঠিন হতে পারে। […]
[…] , কিভাবে এই জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছি ? প্রথম আর দ্বিতীয় পর্বে যা বলেছি তা , […]