মনের জানালা

নিজের স্বভাবে বাঁচা

নিজের স্বভাবে বাঁচা.
নিজের স্বভাবে বাঁচা.

নিজের স্বভাবে বাঁচা.
যদি খাঁটি বাংলা আর আঞ্চলিক ভাষায় বলি। নিজের খাইসলত। যদি বেয়াদবি না থাকে ,যদি সমাজ আর পারিবারিক নিয়মের বাইরে না থাকে ,তাহলে নিজের স্বভাবে বাঁচুন। এই একটা শব্দ কিন্তু অনেক কঠিন অনেকের কাছে। কারণ ভয় হয়। সংসারটা যদি না থাকে। ভয় হয় ,বাবা মায়ের চোখে যদি খারাপ হই। খুব ভয় হয় ,ভালবাসার মানুষটা আমাকে ছেড়ে চলে যাবে নাত? বন্ধুটাকে হারাতে চাই না।
আমিও এই মিথ্যা জার্নির মধ্যে দিয়ে গেছি অনেক বছর। শুধু পেয়েছি কিছুটা বিরক্তি,হতাশা ,অস্থিরতা।
আর না পাবার আর হারাবার ভয়ে নিজেকে এক আতঙ্কে রাখা।

অনেকের মত আমিও এই জীবন যাপন করেছি। ভেবেছি জীবন মানেই মনে হয় শুধুই অন্যকে গুরুত্ত দিয়ে চলতে শেখা।
অপরকে মানিয়ে নেওয়া ,মেনে নেওয়া। অনেক দেরিতে হলেও শিখেছি ,এইটা আমার সম্পূর্ণ ভুল ধারণা ছিল। আমার আবেগ আর অনুভূতিগুলি সম্পূর্ণ আমার।
এদের ভিতরে লালন পালন করা আমার দায়িত্ব এবং কর্তব্য। এদের বুজতে পাড়ার ক্ষমতা কারো নেই।
আমাকে আমার মত করেই অন্যেদের সামনে প্রকাশ করতে হবে। অনেকটা বছর শুধু অন্যের গ্রহণযোগ্যতার জন্য ভেবেছি।

তবে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস আর আর আস্থা না থাকলে কখনই এমন করে ভাবতে পারতাম না। আত্ববিশ্বাসী ছিলাম না।
নিজেকে তৈরী করে নিয়েছি। আস্থা মোটেও ছিল না। নিজেকে বানিয়ে নিয়েছি।
কারণ আমি বুজতে পেরেছি আমার আমিত্মর মাঝেই সুখ আর এর মাঝেই শান্তি।
সুখ আর শান্তি নিজের ভিতরেই খুঁজে নিতে হয়।

তখন কলেজের গন্ডি পেরিয়েছি মাত্র। আমার পছন্দ কাল টিপ্ ,
শর্ট হাতা জামা সাথে ওড়নাটা একদম কালারফুল পাতলা কাপড়ের।

ঠিক বড়আপা আলাদা। কোনদিন দেখিনি ছোট হাত জামা পড়তে।
টিপ্ মানেই ওর কাছে হাস্যকর একটা বিষয়।
আমি খুবই ইন্ট্রোভার্ট একটা মেয়ে। মনের কথা গুলি শুধু ওকেই বলতাম।

ওর সাথে অনেক কথা হত ,যদিও দুজনের রুচি আর ব্যক্তিত্ব পুরাই আলাদা ছিল কিন্তু জমে যেত কারণ কিছু কথা থাকে যা উজাড় করে বলার একটা যায়গা ,
একটা মানুষ খুব দরকার হয় ,সেই সুজুগটা আমি পেয়েছিলাম।
তাই ওকে খুশি করাই ছিল আমার মুখ্য উদ্দেশো।

ঐযে ওকে কাছে পাবার, আপন করে রাখার একটা তাড়া ভিতর থেকেই কাজ করত।ওকে খুশি করার জন্য ফুল হাতা জামা বানাতাম।
কিন্তু পড়তে একদম খুশি লাগত না।
শুধু মনে হত ওই খুশি হবে। কিন্তু মজার বিষয় সে হয়ত এত বছরে কোনদিন জানতোই না।
এগুলো শুধুই তার জন্য ছিল আমার ভাল লাগত না।

বাবা মায়ের কাছে থাকার সময় শুধু ভাবতাম এইটা করলে আব্বা খুশি হবে। সেইটা করলে খুশি হবে। তখন আমার অস্তিত্ব কি বুঝতামই না। শুধু আব্বাকে খুশি করাই ছিল জীবনের গোল।

বিয়ের পর দুই বছর উনি আসার আগে আমি সেজে গুঁজে থাকতাম। একবার ঘরের চারিদিক খেয়াল করতাম সব ঠিক আছে কিনা। যেন সে এসে সুন্দর গুছানো ঘর দেখে। সে কোনদিন ভাবতেই পারেনি এমন আবার হয় নাকি? ঘরে ঢুকেই দেকি বউ সেজেগুজে আছে । আমরা জীবনে যা অনুশীলন করি সেটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি। ওর অনুভূতি আমাকে বিব্রত করতে লাগলো।

এখন আর কোন কাজ বড় আপাকে খুশি করার জন্য করি না। এখনো পোশাকের রুচি আমাদের আলাদা।
খুবি অগোছালো জীবন চালানোর ক্ষেত্রে। আমি ওকে যে পরিমাণ ধমক দেই,আর কারো কাছে মনে হয় না সে এত বকা খাইছে।

কিন্তু কি অদ্ভুত তাঁর ভালবাসার প্রকাশ মনে হয় এখনই পাচ্ছি শতভাগ।
সে চা পান করে না কিন্তু বাইরে গেলে আমাকে প্রপোজ করে চা খাবি। বাইরের ভাঁজাপোড়া পছন্দ না কিন্তু ঠিকই জানে আমি পছন্দ করি।
আমাকে এনে দিবে। কাপড় আর আমাকে ছাড়া কিনে না ভাবে ওর পছন্দ যদি না হয়।
আমাকে গুরুত্ত দিয়ে আমাকে সাথে নিয়ে আমার পছন্দ মাফিক কিনবে।

আমি আর আব্বাকে খুশি করার জন্য কিছু করি না। শুধু দায়িত্ব আর ভালবাসা থেকেই করি। কিন্তু আব্বা এখন আমাকে অনেক গুরুত্ব দেয়। কত বছর আমি তার মনোযোগ পেতে চেষ্টা করছি কিন্তু এই বিষয় আব্বার ভাবারও সময় ছিল না।

এখনো সাজুগুজু করি। কারণে অকারণে সাজি কিন্তু তাকে খুশি করার জন্য নয়। নিজেই নিজের জন্য সাজি। কিন্তু আমার সেই সাজুগুজু দেখার জন্য উনি এখন আমায় খুঁজে বেড়ায়।

নিজের স্বভাবে  বাঁচুন। অনেক স্বস্তি থাকে এখানে। যারা ভালবাসার তাঁরা, আমি যেমন তেমন টাকেই ভালবাসবে।
মিথ্যা , লুকোচুরি আর অভিনয় করে কিছুই জীবনে হাসিল করা যায় না। আর যদিও পাওয়া যায় তাঁর স্থায়িত্ত খুবি কম।
যারা কাছে থাকার তাঁরা আমাকে দেখে বুজেই কাছে থাকবে। তাদের কাছে রাখাঁর জন্য কোন অভিনয়ের দরকার হবে না।

ads