শিশুর বাড়তি খাবার .শিশুর ছয় মাস পর বাড়তি খাবার কি খাবে? কি ধরনের খাবার তার শরীরের জন্য উপকারী হবে ? আমি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিশ্চিনাতো ? বাবুকে প্রথম মুখে বাড়তি খাবার দেবার আগে এমন হাজার প্রশ্ন আমার মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলও। অন্যানও সকল সচেতন মায়েদের মতো আমারও অনুসন্ধানের শেষ ছিল না। অবশেষে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছি , সঠিক ভাবে খাবারের নিয়ম জেনে। সাত মাস বয়সেও তার আসল খাবার মায়ের বুকের দুধ। তবে বাড়তি খাবার একটু একটু করে খাওয়াতে হবে। তবে বাড়তি খাবারের পরিমান হবে কম।দিনে তিন বেলা। এর থেকে বেশি বার নয়। একবার ভাবেন ওর পাকিস্থলী কতটুকু। এখন প্রশ্ন হলো তিন বার কি ধরনের খাবার খাওয়াবো ?এই সময়ে মায়ের বুকের দুধতো খাবেই , পাশাপাশি দিতে হবে বাড়তি খাবার।
শিশুর বাড়তি খাবারের তালিকা :
দুপুরে ও রাতে খিচুড়ি অথবা ভাত খুব নরম করে রান্না করে সাথে ডাল , কাটা ছাড়া মাছ অথবা মুরগির কলিজা চামচ দিয়ে ভালো ভাবে চটকিয়ে খাওয়াতে হবে। তবে ঝাঁল যেন না হয়। বলা হয়ে থাকে ,এই বয়সেও শিশুর মূল খাবার মায়ের দুধ।
সকাল বেলা দেয়া যাবে হালকা কোনো খাবার যেমন ফলের রস বা নরম ফল, যেমন কলা , আধা সেদ্ধ ডিম, সবজির স্যুপ বা ছোট মুরগির স্যুপও শিশুর জন্য ভালো। আমি বেশির ভাগ সময় দিয়েছি
এক ,কলা + ওটস ,সামান্য পানি দিয়ে ভালো ভাবে মিক্স করে দিয়েছিলাম।
দুই ,দেশি মুরগির ডিম হাফ বয়েল।
তিন , মিষ্টি আলু সেদ্ধ।
চার ,সপ্তাহে ২/৩ দিন পোলার চাল খুবেই সামান্য লবন আর পর্যাপ্ত পানি দিয়ে সেদ্ধ ।
পাঁচ , গাজর সেদ্ধ। ছয় ,সবজির স্যুপ বা ছোট মুরগির স্যুপও।
আমি দেখেছি খাবারের মধ্যে ভেরিয়েশন আনলে খাবার মনোযোগ দিয়ে খেত। একেই খাবার প্রতিদিন দিলে খেতে অনাগ্রহ দেখাতো। বাচ্চাকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে , কি পছন্দ করছে আর কি করছে না। বাজারের বিভিন্ন খাবার বিক্রির জন্য বলা হয়ে থাকে পুষ্টি উপাদানমিশ্রিত , আসলে তেমন ভালো কিছু বা উপকারী মোটেও নয়। তাই এইসব খাবার এভোইড করাই অনেক ভালো। বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান দিয়ে সুস্বাদু খাবার বাড়িতেই তৈরি করে দেওয়া অনেক ভালো।
সাত থেকে এক বছর বাচ্চাদের খাবারের কিছু মেন্যু
বাড়তি খাবার দেবার আগে যা জানা দরকার !!
১. এই সময়ে শিশুর জিহ্বাতে ‘টেস্ট বাড’ (বিশেষ ধরনের মাংসপেশি যার মাধ্যমে শিশু দুধ ছাড়া বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বুঝতে পারে) তৈরি হয়। তাই খাবার সামান্য হলেও খেতে যেন সুস্বাদু হয়, সেটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
২. খাবারের বাটি, চামচ যেন পরিষ্কার হয়। একেই খাবার রেখে দিয়ে আগামি কাল খাওয়াবেন না। প্রতিবারের খাবার প্রতিবার রান্না করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে আপনার শিশু কতটুকু খাবার খেলো। আন্দাজ করে অতটুকু রান্না করবেন।
৩. বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানমিশ্রিত খাবার বাইরে থেকে কিনে আনার চেয়ে ঘরেই বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান দিয়ে সুস্বাদু খাবার তৈরি করে দেওয়া ভালো।
৪. কোনো অবস্থাতেই শিশুকে জোর করে খুব বেশি পরিমান খাবার খাওয়ানো ঠিক নয়। যখন দেখবেন যে খাবারে অনাগ্রহ প্রকাশ করছে তখন খাবার দেয়া বন্ধ করে দিতে হবে। কিভাবে বুজবেন সে আর খেতে চাইছে না ? জিব্বা দিয়ে খাবার ফেলে দিবে। মুখ এদিক সেদিক ঘুরিয়ে নেবে। অনেক মাকে দেখি ধমক দিয়ে খাবার খাওয়াতে। বেশি খাবার খাওয়ালে শিশুর কখনো ভালো কিছু হবে না , খারাপ ছাড়া।
৫. খাবার কখনো ব্লেন্ড করে দেবার প্রয়োজন নেই। ভালো ভাবে সেদ্ধ করে , হাত দিয়ে অথবা চামচ দিয়ে চটকিয়ে নিবেন। কারন যে বাচ্চা কে ব্লেন্ড করে খাবার খাওয়ানো হয়, পরে একটু আঁশ যুক্ত খাবার আর খেতে চাইবে না।
৫. গরুর দুধ কিংবা অন্য কোনো প্রকার কৌটার বাজার জাত দুধ খাওয়ানো যাবে না। দুই বছর পুর্ণ হবার আগে গরুর দুধ দেয়া যাবে না। কারন এই দুধ হাই প্রোটিন যুক্ত। হজমে নানা প্রকার সমস্যা হবে। পেটের অসুখ লেগেই থাকবে।
৬. এই বয়সে বাড়তি পানি খাবারের খুব বেশি দরকার হয় না। পানি খাবারের জন্য প্রেশার দেয়া ঠিক না। সামান্য খেলেই যথেষ্ট। কারন হলো , সে বাড়তি খাবার খাবে তিন বার , যে খাবারটা হবে একেবারেই তরল। দ্বিতীয় কারন হলো সারাদিন, যখন শিশু বুকের দুধ চাবে তখনি দুধ খাওয়াতে হবে। দুধ খেলে পানি দেবার প্রয়োজন হয় না।
আমাদের দেশের বিভিন্ন পত্রিকা বিভিন্ন সময় , শিশুদের বিভিন্ন বিষয়ে লিখে থাকে। যে গুলি পড়া বা জেনে রাখা খুব দরকার। যে পরামর্শ পড়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে উপকৃত হয়েছি। আমি এমন কিছু পরামর্শ পেয়েছি যেগুলি হুবুহু তুলে ধরলাম , আপনাদের সুবিধার্তে। একেই সাথে কৃতজ্ঞতা জানাতেই হবে এত সুন্দর করে আর্টিকেল লেখার জন্য।
প্রথম আলো
ভাবনা যখন শিশুর খাবার !!
তারিখ :০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধ্যাপক সাঈদা আনোয়ার বলেন, “ছয় মাস থেকে এক বছর বয়সী শিশুদের মায়ের দুধের পাশাপাশি তিন বেলা বাড়তি খাবার দেওয়া প্রয়োজন।তবে এই বয়সেও শিশুর মূল খাবার মায়ের দুধ। অর্থাৎ, বাড়তি খাবারের পরিমাণটা হবে কম।
তিন বেলা খাবারের মধ্যে দুবেলা খিচুড়ি বা নরম ভাতের মতো একটু ভারী খাবার দেওয়া যেতে পারে। বাকি এক বেলা হালকা কোনো খাবার (ফলের রস বা নরম ফল, যেমন কলা) দিতে পারেন।”
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা শামসুন্নাহার নাহিদ দিলেন আরও কিছু পরামর্শ। তিনি বলেন, ‘যে সময়টাতে শিশুকে মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার খাওয়ানো হয়, সে সময়টাতে শিশুর অন্যান্য খাবারের ঘনত্বও মায়ের দুধের মতো হওয়া প্রয়োজন।’
শিশুকে শক্ত খাবার, যেমন বিস্কুট বা শক্ত ভাত দেওয়া ঠিক নয়।
শিশুর খাবার ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে বারডেম হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগের প্রধান তাহমিনা বেগম বলেন, ‘শিশুকে প্রতিদিন নতুন রান্না করা খাবার খাওয়াতে হবে। ফ্রিজে রাখা বা বাসি খাবার খাওয়ানো যাবে না। শিশুর খাবার খাওয়ানোর বাটি, চামচ ও যিনি খাওয়াবেন তাঁর হাত অবশ্যই পরিষ্কার থাকতে হবে।’ শিশুকে ছয়-নয় মাস পর্যন্ত অন্য খাবার দিনে তিনবার খাওয়াতে হবে।
শিশুকে নতুন খাবার দেওয়ার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখুন, শরীরের কোথাও র্যাশ, বমি বা ঢেকুরের পরিমাণ বেশি হচ্ছে কি না। বাচ্চার কান্নার পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে গেছে বা পেট ফুলেছে, প্রস্রাব-পায়খানায় পরিবর্তন অনুভব করলে সেই খাবার বন্ধ করতে হবে। অবস্থা বেগতিক মনে হলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
এনটিভি ডট কম
তারিখ :২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
তামান্না চৌধুরী : প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো হাসপাতাল ” শিশুর খাবারে যেন কোনোভাবে বাড়তি চিনি দেওয়া না হয়। ঝাল, মসলা ও তেলের বিষয়ে যথেষ্ট সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। একটি শিশুর পাকস্থলি অনেক ছোট হয়। সাধারণত প্রতিটি খাবারের পরিমাণ ১০০ থেকে ১২০ এমএলের মধ্যে রাখা যেতে পারে। অবশ্য এই বিষয়টি শিশুর বর্তমান ওজন ও শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করবে।খাবার খাওয়ানোর ক্ষেত্রে বাটি-চামচ ব্যবহার করতে হবে। কোনোভাবে ফিডার ব্যবহার করা যাবে না।শিশুকে জোড় করে খাওয়ানো যাবে না।”
Add Comment