মায়ের বুকের দুধ পাচ্ছে না। এই বাক্যটা খুবেই সুপরিচিত। আমার কাছে মনে হয় , এর সমাধান খোঁজার আগে কারন জানা খুব দরকার। আমরা যদি জানতে পারি বুকের দুধ না পাবার কিছু সম্ভাব্য কারন , তাহলে সমাধান খুঁজে পাওয়া খুবেই সহজ হবে। মায়ের বুকের দুধের কোন বিকল্প নেই।
এই কথাটা বিশ্বাস করেন। আর একটা বিষয় জেনে রাখা ভালো , একজন সুস্থ মায়ের বুকের দুধ না আসার কোন কারন নাই। অনেকের অভিযোগ শিশু শুধু কাঁদে। মনে হয় দুধ পায় না। ভুল কথা। একটা শিশু অনেক কারনেই কাঁদতে পারে। ৯৯% বেবি কাঁদে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে গড়ে এক ঘন্টা কান্না করা স্বাভাবিক বিষয়। কারো শিশু রাতে কাঁদে কারো দিনে।
দুধ পাচ্ছে না বলে ফমুর্লা বা কৃত্রিম দুধ কিছুতেই দেবেন না, এতে মায়ের দুধ আরও কমে যাবে। একটা সময় দুধ বের হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। মায়ের বুকের একফোঁটা দুধ খেয়ে তিন দিন আপনার বেবি সুস্থ থাকতে পারে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমার বাবু জন্মের পর কাঁদতো। সবার কথা বেবি দুধ পায় না।
যখন আমি একজন ভালো ডাক্তার দেখালাম , উনি বেশ অভিজ্ঞ , বয়স্ক একজন ডাক্তার। আমাকে বলেছিলো , আপনার শিশুকে বুকে নিয়ে থাকেন। একজন মায়ের শরীরের গন্ধ শুকেও বাচ্চারা সুস্থ থাকতে পারে। কোনো কারনেই , কোনো ভাবেই ফর্মুলা দুধ নয়। কৃত্রিম দুধ এক ফিডার খেলে উপকার তো হবেই না , বরং একটা সময় বিভিন্ন অসুখ দেখা দেবে।
শিশুর মায়ের বুকে দুধ তৈরি হওয়া একটা ‘ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই সিস্টেম’ অনুসরণ করে। অর্থাৎ শিশু যত দুধ টানবে, তত মায়ের মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থি উদ্দীপ্ত হয়ে বেশি বেশি প্রলেকটিন হরমোন তৈরি করবে। তত বেশি দুধ উৎপাদিত হবে। বুকের দুধ তৈরির একমাত্র উদ্দীপক বা স্টিমুলাস হলো শিশুর দুধ টানা। তাই যে মায়েরা একেবারে শুরু থেকেই বারবার দুধ দেননি, তাঁদের এই উৎপাদনপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
অনেক মায়েরা ভাবতে থাকেন, তার শিশু দুধ পাচ্ছে না। অথচ সে ঠিক মতোই বুকের দুধ পাচ্ছে। কিভাবে বুজবেন আপনার শিশু ঠিক মতো বুকের দুধ পাচ্ছে? নবজাতক শিশু দিনে সাত-আটবার প্রস্রাব করবে এবং দুই-তিনবার মলত্যাগ করে। এই বিষয় টা খেয়াল রাখতে হবে। তবে হ্যা , অনেক সময় মলত্যাগ একবার অথবা কোনোদিন নাও করতে পারে তাতে কোনো সমস্যা নেই। শুধু লক্ষ রাখবেন মিনিমাম সাত বার প্রস্রাব করছে কিনা। এর বেশিও করতে পারে তবে কম করলে ভাবতে হবে দুধ কম পাচ্ছে।
মায়ের বুকের দুধ না পাওয়ার আর একটা মেজর কারন বলি। অনেক মায়েরা নিজেরাই এই ভুল করে থাকেন। ওরা মনে করে দুধ পাচ্ছে না। একটু ফিডারে দুধ খাওয়ালে ওর পেটেও ভরবে আবার বুকের দুধও খাবে। আসলে এইটা একজন মায়ের মানসিক সন্তুষ্টি ছাড়া কিছুই না। কারন যখন একটা শিশু ফিডারে দুধ খায় , তখন আর বুকের দুধ টানতে চাই না।
এই কারনে মায়ের বুকের দুধ ধীরে ধীরে আসা কমা থেকে শিশুর বুকের দুধ খাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
শিশুর জন্মের প্রথম দিনগুলোতে ২/১ বোতল দুধ খাওয়ালেই বুকের দুধ খাওয়ানোর সম্ভাবনা এক তৃতীয়াংশ কমে যায়। ফিডারের নিপল আর স্তন চোষার মধ্যে পার্থক্য আছে। স্তন চোষা আর ফিডার এর নিপল চোষা নিয়ে বিভ্রান্তিতে ভুগলে সে শিশু মায়ের দুধ কম খেতে পারে। এর ফলে মায়ের বুকের দুধ তৈরি কমে যায়।
মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে কিছু পরামর্শ
নবজাতককে ঘন ঘন বুকের দুধ চোষাতে হবে। চুষলেই মায়ের বুকের দুধ আসবে। না চুষলে বুকের দুধ আসবে না।একটি স্তন অন্তত ১৫ মিনিট খাওয়াবেন। এতে উভয় স্তনে মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি পাবে।বারবার এবং যতবার শিশু চায়, ততবারই দুধ দিতে হবে। ধৈর্য ধরে খাওয়াতে হবে, আগেই সরিয়ে নেওয়া উচিত নয়।
মনে রাখতে হবে শিশু দুধ খেয়ে বুক খালি করলেই আবার দুধ তৈরি হয়। কখনোই বুকে দুধ জমিয়ে রাখার প্রয়োজন পড়ে না। বরং দুধ জমে থাকলেই দুধ তৈরি কম হয়। তাই শিশুকে বার বার মায়ের দুধ খাওয়ানো দরকার।
নিজের খাবারে প্রতি একটু লক্ষ রাখেন। ডাল, সবজি, কালোজিরার ভর্তা অথবা খাবারের সময় গরম ভাতের প্লেটে একটু কালোজিরা ছিটিয়ে খেলেই হবে। ডাক্তার আমাকে আরো বলেছিলো , আহামরি কিছু খেতে হবে ,এমন টা কিছু নয়। অনেকেই অনেক কিছু উপদেশ দেয় এইটা সেইটা খাবারের জন্য।
গুরুত্ব দেবার দরকার নাই। দৈনন্দিন বাসায় যা রান্না হবে তাই খাবেন , শুধু খাবারের পর হয়তো একবাটি ডাল খেলেন। সবজি একটু বেশি খেলেন। যা একটু ঝোল করে রান্না করে , প্রতিদিন মেনুতে রাখার চেষ্টা করবেন লাউ, ডুমুর, পালংশাক, কলমিশাক, টমেটো প্রভৃতি।
মাকে ঘুম ও বিশ্রামের ব্যাঘাত ঘটানো যাবে না। স্তন্যদানের ১৫ মিনিট আগে মা দুই গ্লাস পানি পান করে নিলে স্তন্যদান সহজ হবে।
Add Comment