নবজাতক শিশুর যত্ন নিতে প্রত্যেক মা উঠেপড়ে লাগেন। আর এই যত্ন নিতে কিছু খুব সাধারন বিষয়ে সঠিক জ্ঞান থাকা দরকার।
এই সময় শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৷ ভালবাসা আর আদরের মাঝে তাকে রাখার সাথে সুস্থ-সুন্দর থাকা নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপদ এবং সুস্থ রাখতে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতার কোন বিকল্প নেই ৷ পৃথিবীর প্রত্যেকটা মা তার সন্তানের ভালো করতে চান। কিন্তু কিছু ভুল হয়ে যায় , আনাড়ী কিছু আত্মীয় স্বজনের উপদেশে , কিছু ভুল হয় নিজ নলেজের অভাবে।
জন্মের পর পরে খাবার
শিশু জন্মের পরেই মায়ের বুকের দুধ দিতে হবে। অনেকে এই দুধ হাত দিয়ে চিপে ফেলে দেয়। এর কোনো অর্থ নেই শুধু মূর্খতা ছাড়া। এই সময় কাছের কেউ বাচ্চাকে মায়ের বুকের বাট নবজাতকের মুখে দিয়ে ধরে রাখবে , যদি এই সময় মা অনেক ক্লান্ত থাকে। বাচ্চা নিজ থেকেই দুধ টানবে , যতটুকু ওর মুখে যায় তাই অনেক উপকার হবে বাচ্চার ভবিষতের জন্য। এই শালদুধেই আছে শিশুর প্রথম প্রয়োজনীয় পুষ্টি। ভুলটা যেন শুরুতেই না হয়। তারপর প্রথম ছয় মাস কোনো কথা , কারো কোনো রকম উপদেশ শোনা যাবে না , কৃত্রিম দুধ খায়ানোর জন্য। এই সময় শুধু মাত্র বাচ্চা বুকের দুধ খাবে। বুকের দুধ খাওয়াতে অনেক সময় , পরিবারের মানুষ গুলোর সাপোর্ট আর ধৈর্যের প্রয়োজন অনেকে এইটা এড়াতেও ফিডারে অভ্যাস্ত করে তোলে।
ফিডার কোনো অবস্থাতেই নয়
একজন ভালো শিশু বিশেষজ্ঞ কখনই বোতলে দুধ খাওয়াতে বলবে না। ঘুমের মধ্যে অথবা জেগে অথবা মা যদি দীর্ঘ সময় ঘরের বাইরে থাকে তবুও না, কোনো কারনে বা কোনো যুক্তি দেখিয়ে নয়। এমনকি বাচ্চা যদি কাঁদে তার কান্না থামানোর জন্য মুখে চুষনি পর্যন্ত দিতে নিষেদ করে। মা যদি বাইরে যায় তাহলে বুকের দুধ তুলে রেখে যাবেন। সেই দুধ চামচ দিয়ে খাওয়াতে হবে।
নবজাতকের নাভির যত্ন
বাচ্চা জন্মের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কোনো ডাক্তার ,নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীরাই ক্লোরহেক্সিডিন নামে একটা ঔষধ লাগিয়ে দেন।৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেলে নাভিতে কোনো ড্রেসিং, ব্যান্ডেজ বা অ্যান্টিসেপটিক মলম কিছুই লাগানোর প্রয়োজন নেই। নাভি সব সময় শুকনো, পরিষ্কার ও খোলা রাখতে হবে। অহেতুক নাভিতে হাত দেবেন না। সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনে নাভি পড়ে যায়। এর মধ্যে যদি না পড়ে তবুও টেনশন করবেন না। কারো বেশি সময় লাগতে পারে। তারপর যে বিষয়টা আসে তা হলো , নাভি শুখানোর বিষয়। অনেকে এই বিষয়টা নিয়ে টেনশন করে। আমিও এর ব্যাতিক্রম ছিলাম না। কারন আসে পাশের মানুষ বলতেছিলো , ১০ দিনেই নাভি শুকিয়ে যায়। কিন্তু আমার বাচ্চার নাভী শুকাতে ২১ দিন লেগেছে।
বিভিন্ন জন বিভিন্ন কিছু লাগাতে বলেছিলো কিন্তু আমি কারোটা শুনিনি। কারন আমি জানতাম ক্লোরহেক্সিডিন ব্যবহার করলে আর কিছুই দিতে হবে না। সময়টা বিভিন্ন বাচ্চার বিভিন্ন হতেই পারে। তাছাড়া আমি খেয়াল করছি নাভি থেকে কোনো পুঁজ , রক্ত কিছুই বের হয়নি। কোনো কারনে দুষ্চিন্তা করার কোনো কারন দেখছিলাম না। কিন্তু কিছু মানুষ আমাকে নেগেটিভ কথা বলে উপদেশ দিয়েছিলো তেল লাগিয়ে রাখলে ভালো, আবার কেউ বারবার অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম লাগাতে চেয়েছিলো । আমি কারো কথায় কান দেইনি।
যেকোনো বিষয়ে আপনি যখন সঠিক তত্ত্ব জানবেন তখন আপনার আত্ম বিশ্বাস আপনাকে সাহায্য করবে আসেপাশের নেগেটিভ দৃষ্টিভঙ্গির মানুষের সাথে লড়াই করতে হয় কিভাবে। অবস্থা যাই হোক সঠিক পথে থাকলে ফলাফল সবসময় ভালোই হয়।যদি দেখেন বাচ্চার নাভির চারপাশ ফুলে গেছে , কান্না করলে আরো ফুলতেছে , একে নাভির হার্নিয়া বলে। কান্নাকাটি করলে, কোষ্ঠকাঠিন্য বা অন্য কোনো কারণে পেটের ভেতরে চাপ বেড়ে গেলে নাভি আরও ফুলে ওঠে। পরে আবার আগের মতো হয়ে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এক বছরের মধ্যে এটি ভালো হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে চার-পাঁচ বছরও লাগতে পারে।এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না।
নবজাতকের গোসল
নবজাতকের গোসল নিয়ে আছে অনেক কুসঙ্কার। আগে জেনে নেই বিশেষজ্ঞরা কি বলেন। স্বাভাবিক ওজনের একটি সুস্থ শিশুকে (ওজন ২.৫ থেকে ৪ কেজি) জন্মের তিন দিন পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই গোসল করানো উচিত। নাভি না পড়লেও গোসল করানো যায়।উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় গোসল না করালেই বরং শিশু অস্বস্তি বোধ করে, বারবার ঘেমে যায়। ঘাম বসে গিয়ে ঠান্ডা লাগতে পারে। তাই প্রতিদিন পানি রোদে দিয়ে কুসুম গরম হলে গোছল করাতে হবে। যদি সূর্যের আলোর অভাব থাকে তাহলে পানি ফুটিয়ে কুসুম গরম করে গোছল করাতে হবে।
গোসলের পানিতে সব সময় ডেটল, স্যাভলন, সেনিটাইজার বা অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণ ব্যবহার করা উচিত নয়। অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণ বা সাবান ত্বকের উপকারী জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়াকেও ধ্বংস করে। ফলে ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যাহত হয় ও ক্ষতিকর জীবাণুর সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে। তা ছাড়া এগুলো বেশ কড়া রাসায়নিক ও ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।নবজাতক শিশুরা যেহেতু বাইরের ধুলা-ময়লার সংস্পর্শে তেমন আসে না, তাই রোজ সাবান দেওয়ারও দরকার নেই। সপ্তাহে এক দিন সাবান ও শ্যাম্পু সহযোগে গোসল করাতে পারেন।
Add Comment