নবজাতকের জন্ডিস কি ?
নবজাতকের জন্ডিস কি , এই বিষয় টা আগে জানতে হবে। আমাদের শরীরে যে রক্ত হয়, প্রতিনিয়ত সে রক্তটা ভেঙ্গে যায়। ভেঙ্গে গিয়ে নতুন রক্ত তৈরি হয়। এখান থেকে বিলুরুবিন বের হয়। এর রংটা হলুদ। এর পরিমাণ যখন বেড়ে যায় তখনই জন্ডিস হয়। নবজাতকের যখন এটি হয়, তখন আমরা একে নবজাতকের জন্ডিস বলি।
জন্ডিস কেন হয় ?
শিশুর জন্ডিস বিভিন্ন কারনে হতে পারে। মায়ের পেটে থাকাকালীন শরীরে যে বেশি পরিমাণে রক্ত থাকে, লাল রক্ত কণিকা, সেটা ডেলিভারি (প্রসব) হওয়ার পর আস্তে আস্তে ভেঙ্গে যায়। ভেঙ্গে বিলুরুবিনটা বের হয়ে আসতে থাকে। এরপর আমাদের লিভার একে প্রসেসিং (প্রক্রিয়াজাত) করে সলিউবল (দ্রবণীয়) করে প্রস্রাব পায়খানা দিয়ে বের করে দেয়। এতে জন্ডিস কমে যায়। কিন্তু নবজাতক যারা, তাদের এই জন্ডিস সামলানোর শক্তি কম থাকে। কারন , তার লিভার অপরিপক্ব থাকে। এর জন্য সে সবটুকু বের করতে পারে না। তখনই তার জন্ডিস বৃদ্ধি পায়।
আরো কিছু সম্ভাব্য কারন
- বাচ্চা যদি জন্মের পর মায়ের দুধ কম পায়।
- কিছু কিছু মায়ের দুধে এমন একটি উপাদান আছে, যেটা বিলুরুবিনকে লিভার দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে বের করে দেওয়ার ক্ষম
- তাকে বাধা দেয়। এতে শিশুর জন্ডিস বেড়ে যায়।
- মায়ের যদি নেগেটিভ রক্তের গ্রুপ থাকে আর শিশুর যদি পজিটিভ রক্তের গ্রুপ হয়, সেই ক্ষেত্রেও জন্ডিস বেড়ে যাবে।
- প্রসবের সময় শিশু যদি শরীরের কোথাও আঘাত পায় ,তা হলেও জন্ডিস হতে পারে।
- কম ওজনে ভূমিষ্ঠ শিশু বা সময়ের আগে জন্ম নেওয়া শিশুরা জন্ডিসে বেশি আক্রান্ত হয়।
- গর্ভাবস্থায় মায়ের কোনো সংক্রমণের ইতিহাস থাকলে।
কিভাবে বুজবেন আপনার শিশুর জন্ডিস হয়েছে ?
- প্রস্রাব হলুদ হয়ে যাবে।
- চোখ হলুদ হবে।
- কপাল ও পেট হলুদ হবে।
- পায়ের তলায় এবং হাতের তালু হলুদ হয়ে যাবে।
- মলের রং সবুজ হতে পারে।
জন্ডিস হলে কী করবেন?
এই প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে কিছু বিষয় জানি। শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ নবজাতকেরই জন্মের পর পর জন্ডিস হতে পারে।অনেকে মনে করে, এটি হয়তো খারাপ কিছু। জন্ডিস বললে সবাই একটু ভয় পেয়ে যায়। নবজাতকের জন্ডিস খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপার।অধিকাংশ নবজাতকেরই জন্মের পর জন্ডিস হতে দেখা যায়।এতে ভয় পাবার কিছু নেই। বাড়িতে একটু যত্ন নিলে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। প্রশ্ন হলো যত্ন কিভাবে নিবো ? যদি দেখেন চোখ হলুদ হয়ে গেছে। প্রচাব হলুদ করে। হাতের তালুও সামান্য হলুদ দেখা যায়। তখন যে কাজ অবশই করবেন।
সকাল বেলা উঠে সূর্যের আলোতে আপনার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন। যেন সকালের প্রথমদিকের এবং মৃদু রোদ হয়। প্রথম যে রোদটা আসে অর্থাৎ আলোর তাপ আপনার গায়ে লাগবে না কিন্তু রোদ ঝলমল করছে। মিনিমাম ৪০ মিনিট রোদ লাগাতে হবে। যখন রোদের তাপ একটু আপনার গায়ে লাগছে তখন আর দিতে হবে না। সূর্যের কড়া রোদ ও অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দ্বিতীয় হলো , ধৈর্য ধরে , সময় নিয়ে ,বুকের দুধ খাওয়াবেন। যত বুকের দুধ খাবে তত বেশি প্রচাব পায়খানা করবে। সেই সাথে ধীরে ধীরে হলুদ ভাব কেটে যাবে। একে বলে ফিজিওলজিক্যাল বা স্বাভাবিক জন্ডিস। ফিজিওলজিক্যাল বা স্বাভাবিক জন্ডিসের মূল চিকিৎসাই হচ্ছে শিশুকে ঠিকমতো বুকের দুধ খাওয়ানো।
কখন বুজবেন ডাক্তার দেখানো উচিৎ ?
পায়ের তালু হলুদ হয়ে গেছে। মুখমন্ডল হলুদাভ হয়ে গেছে। বিলিরুবিনের মাত্রা ১৫ মি গ্রাম/ডেসির বেশি।২ সপ্তাহ বয়সের পরও ঠিক না হওয়া। সাধারন জন্ডিস ১০ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায় কিন্তু এই জন্ডিস যদি ১৫ দিনেও ভালো না হয় বুজতে হবে এইটা ভয়ের কারন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একজন ভালো ডক্টর দেখান। মনে রাখতে হবে, বিলিরুবিনের অতি মাত্রা , শিশুর স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে সাধারণত শিশুকে ফটোথেরাপি বা আলো চিকিৎসা দেওয়া হয়। বেশির ভাগ শিশু এক থেকে দুই দিন ফটোথেরাপি পেলেই ভালো হয়ে যায়।এ পদ্ধতিতে শিশুকে একপ্রকার বিশেষ ধরনের আলোর নিচে রাখা হয় যা বাচ্চার শরীরের বিলিরুবিনকে এমন এক ফর্মে রুপান্তরিত করে যাতে তা বাচ্চার প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যেতে পারে। এক ধরনের বেগুনি আলোর মধ্যে, হালকা গরম আবহাওয়ায় শিশুটিকে কিছু সময়ের জন্য রাখতে হয়। শিশুকে সাধারণত চোখ ঢেকে দেওয়া হয়।
Add Comment