জিরো থেকে এক বছর

বয়স অনুযায়ী শিশুর ওজন ঠিক আছে তো?

বয়স অনুযায়ী শিশুর ওজন
বয়স অনুযায়ী শিশুর ওজন

বয়স অনুযায়ী শিশুর ওজন কত হবে বা কত হওয়া উচিৎ , সেই তত্ত্ব বলার আগে একটু জেনে নেই কয়েকটা খুবেই সাধারন প্রশ্নের উত্তর। আমি মনে করি এই বিষয় গুলি জানা খুবেই দরকার। আমরা বাঙ্গালী নিজেরা যেমন খেতে পছন্দ করি ,ঠিক নিজ সন্তানকেও খাইয়ে আমাদের তৃপ্তি হয় না।

যার কারনে যে বয়সে যত ওজন হওয়া দরকার , তার থেকে দ্বিগুন বা তিনগুন ওজন বাড়িয়েও আমাদের অভিযোগ ,আমার বাচ্চাটা কিছুই খেতে চায় না। যে ভুলের কারনে মারাত্মক রোগে ভুগতে পারে নিজ সন্তান।

১.শিশুর অতিরিক্ত ওজনের ফলে কী কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?

শিশু মোটা সোটা হলে হয়তো দেখতে ভালো লাগে। মা-বাবা অনেক খুশি হয় , নিজেদের খুব আত্মবিশ্বাসী বলে প্রকাশ করেন অন্যদের সামনে। আমাদের আশেপাশের মানুষ গুলিও বাহবা দিয়ে থাকে , সেই সব মায়েদের , যাদের বাচ্চা নাদুস নুদুস , সেই সব মায়েরা বাচ্চা দের খুব যত্ন নেয়। আর ওপর দিকে যাদের বাচ্চা একটু হালকা পাতলা , সেই সব মায়েদের শুনতে হয় “আপনি কেমন মা “, “বাচ্চাকে খেতে দেন না “, “আপনার বাচ্চাকে একটু খেয়াল রাখবেন ” আরো যে কত কিছু।

কিন্তু ভবিষ্যতে এর ফলাফল খুব খারাপ হয়। আমাদের শরীরের বিভিন্ন যায়গায় ,বিভিন্ন ধরনের টিস্যু থাকে। ওজন বেশী মানেই হলো ওই সব টিস্যুতে চর্বি জমা হয়। ওজন বেশি হলে বাচ্চার শরীরের সবদিকেই চর্বিযুক্ত টিস্যুগুলো বেশি বেড়ে যায়। আর বড় হলেও এইসব থেকে যায়। একটু একটু করে শুরু হয় শরীরের বিভিন্ন সমস্যা।

#শ্বাসকষ্ট হবে বা দেখা যাবে একটুতেই হাঁপিয়ে উঠছে ।
#তারপর যখন আরেকটু বড় হবে, তখন হয়তো হাঁটুতে ব্যথা করবে।
#ডায়াবেটিস হয়ে যেতে পারে।
#একটুতেই ক্লান্ত হয়ে যায় তাই দৈনিন্দন কাজে অনেক ভুগতে হয়।
# আর অতিরিক্ত ওজন হওয়া কে বলে মুটিয়ে যাওয়া।

২. জন্মের প্রথম ২ বছর যে হরে বাড়ে ?

জন্মের প্রথম মাসে ওজন কমতে পারে অথবা ওজন স্থির থাকে। তারপর ধীরে ধীরে ওজন বাড়তে থাকে। । দ্বিতীয় মাস থেকে ছয় মাসে শিশুর ওজন হবে দ্বিগুন। তারপর একবছরে মানে ১২ মাসে হবে ৩ গুন,২ বছরে হবে ৪ গুন।
অর্থাৎ যদি আপনার শিশুর ওজন জন্মের সময় ৩ কেজি হয়ে থাকে , ছয় মাসে হবে ৬ কেজি আর ১২ মাসে হবে ৯ কেজি , ২ বছরে হবে ১২ কেজি। সামান্য কম অথবা বেশি হলে দুঃচিন্তা কিছুই নাই।   প্রতিমাসে গড়ে সাধারনত ৪০ গ্রাম ওজন বাড়ে। এইটাই প্রকৃতির নিয়ম। । দুই বছরের পর থেকে কিন্তু ওজন অত দ্রুত বাড়ে না।

খুবেই গুরুত্বপূর্ণ যে কথা , মায়েরা যেটা খুব বেশি ভুল করে।  অন্যের শিশুর সাথে নিজের সন্তানকে তুলনা করে , অকারনে দুঃচিন্তা করে। প্রত্যেকটা শিশু আলাদা হয়ে জন্ম গ্রহন করে , তাই কারো সাথে কারো তুলনা করতে যাবেন না।

যে মায়েরা প্রতি মাসে শিশুর ওজন মাপেন।  যদি দেখেন কোন মাসে ওজন কমে গেছে , তাহলেও ধৈর্য ধরেন , অস্থির হবেন না। দ্বিতীয় মাস দেখেন। এইবারও যদি ঘটনার পুনরাবর্তী ঘটে তাহলে বুজবেন , বাবুর পুষ্টির অভাব। পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য প্রথমে বাসায় চেষ্টা করেন। যদি অবস্থার পরিবর্তন না হয় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

জন্মের সময় শিশুর ওজন যদি আড়াই কিলোগ্রামের কম হয় তাহলে ধরে নেয়া হয় নবজাতক শিশুটি ওজনহীনতায় ভুগছেন যাকে বলা হয় Low Birth Weight Baby(LBW)। যদি শিশুর ওজন যদি দেড় কিলোগ্রামেরও কম হয় তাহলে সেই নবজাতককে খুব কম ওজনের শিশু বা Very Low Birth Weight Baby(VLBW) এবং ৭৫০ গ্রামের কম ওজনের হলে তাকে চরম ওজনহীন শিশু বা Extreme Low Birth Weight Baby(ELBW)বলা হয়ে থাকে ।

কেন শিশুর ওজন কম হয় ?

অনেক কারনেই নবজাতকের ওজন কম হয়ে থাকে , আমি কমন কিছু কারন বলছি।

১, সাধারণত প্রিম্যাচিউরড বেবি কম ওজনের হয়ে থাকে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে গর্ভধারণ।
২. ৩৭ সপ্তাহ এর আগে জন্ম কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক জন্ম নেয়া শিশুও কম ওজনের হতে পারে।
৩. মায়ের অপুষ্টি অথবা জেনেটিক্যালি অর্থাৎ বাবা মা যদি মোটা না হয়ে থাকে , তাদের সন্তানও , সাধারনত মোটা হয় না।

বয়স অনুযায়ী শিশুর ওজন ঠিক আছে?

শিশুর জন্মের পর কয়েকদিনে তার ওজন প্রায় ১৫ শতাংশ কমে যায় , এইটা খুবেই স্বাভাবিক। কিন্তু এর পরেই ৭ থেকে ১০ দিনে ওজন পুনরায় আগের মতো হয়ে যায়। তারপর প্রতিদিন গড়ে ২৫ গ্রাম করে বাড়ে। শিশু তার পাঁচ মাস বয়সে জন্মের সময় যে ওজন ছিল তার দ্বিগুণ হবে । এক বছরে জন্মের ওজনের তিন গুন হলে বুজতে হবে , আপনার শিশু স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে উঠছে। এর পর থেকে ওজনের যে তারতম্য লক্ষ করবেন তা , আসলে শিশুর খাবার আর জিনগত বৈশিষ্টের কারনে হয়ে থাকে।

সূত্র :ইন্টারনেট

 

Add Comment

Click here to post a comment

ads