নবজাতকের খাবার বলতে কি বুঝি ? মায়ের বুকের দুধের কোনো বিকল্প নেই । এই দুধের উপকারিতা আসলে বলে শেষ করা যাবে না। সামাজিক ,অর্থনৈতিক , এবং শারীরিক সব দিকে রয়েছে এর উপকারিতা। শিশু ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাবে। তাহলে শিশুমৃত্যুর হার ১৩ শতাংশ কমে যাবে ।
জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের শালদুধ খাওয়ানো উচিত। এই দুধ শিশুর দেহে প্রতিষেধকের মতো কাজ করে। শিশুর ছয় মাস বয়স পর্যন্ত এই দুধেই যথেষ্ট । এমনকি পানিরও প্রয়োজন নেই। কোনো অবস্থায়ই শিশুকে প্রচলিত গুঁড়া দুধ খাওয়ানো যাবে না। এতে শিশু পুষ্টিহীন হয়ে পড়বে। তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
ছয় মাস পর থেকে অন্য খাবারের পাশাপাশি দুই বছর পর্যন্ত শিশুকে মায়ের দুধ দেওয়া উচিত। শিশু নিয়মিত বুকের দুধ খেলে তার স্বাস্থ্য যেমন ভালো থাকে, তেমনি মায়ের স্তন ও জরায়ু ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়।নবজাতক কাকে বলে ? ০ হতে ২৮ দিনের শিশুটিকে নবজাতক বলে।
এই নবজাতকের খাবার নিয়ে চিন্তা করা ঠিক নয়। কারন মা যখন চিন্তা করে তখন বুকের দুধ কমে যাবার সম্ভবনা থাকে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে সুযোগ করে দিতে হবে যেন বার বার বুকের দুধ খাওয়াতে পারে। এই সময় নবজাতক যত দুধ খাবে তত বেশি বুকে দুধ আসবে।
শিশুর জন্য উপকারিতা
- শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদান মায়ের দুধেই আছে।
- খাবার সহজে হজম হয় এবং অ্যালার্জি হয় না।
- মায়ের দুধে অ্যান্টিবডি থাকে, যা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ।
- ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও অন্যান্য সংক্রামক রোগ থেকে শিশুকে রক্ষা করে।
- এই দুধ খেলে শিশুর বুদ্ধি বাড়ে, কৌটার দুধ খাওয়া শিশুদের তুলনায় তাদের বুদ্ধি ৯ গুণ বেশি থাকে।
- একেই সঙ্গে আত্মার বন্ধন তৈরি হয়।
- শিশু ভালো মানুষ হয়ে বড় হয়, মায়ের মমতা ও ভালোবাসা পেয়ে বড় হওয়া শিশু সব মানুষকে ভালোবাসতে শেখে।
- মায়ের বুকের দুধ শিশুর শারীরিক গঠনে বিরাট প্রভাব রাখে।
- যেসব শিশু মায়ের বুকের দুধ পান করে, তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ অন্য শিশুদের তুলনায় বেশি ভালো হয়।
- মা ও শিশুর মধ্যে এক বিশ্বস্ত ও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
মায়ের জন্য উপকারিতা
- মায়ের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়
- এই দুধ প্রাকৃতিক। যেকোনো অবস্থায়, যেকোনো সময় মা খাওয়াতে পারেন। কোনো প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ে না।
- শিশুর জন্মের পর মায়ের রক্তক্ষরণ কম হয়।
- শুধু বুকের দুধ খাওয়ালে প্রাকৃতিকভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণের কাজ করে।
- মায়ের জরায়ু ও স্তন ক্যানসার রোধ করে।
- মায়ের দুধ সত্যিকার অর্থেই শিশুর জীবনের ভিত্তি, শুভসূচনা।
- আমাদের শিশুদের সুস্থ ও সুন্দর করে গড়ে তুলতে আসুন আমরা সবাই যে যেখানে আছি, মাকে সাহায্য করি ।
- পরিবারের সবাইকে উদ্বুদ্ধ করি যেন তারা শিশুকে সফলভাবে মায়ের দুধ খাওয়াতে মাকে সহযোগিতা করেন।
ইসলাম ও নবজাতকে মাতৃদুগ্ধ পান করানো
পবিত্র কোরআনে নবজাতককে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর সময়সীমা সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘যে স্তন্যপানকাল পূর্ণ করতে চায়, তার জন্য জননীরা তাঁদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর দুগ্ধপান করাবেন। জনকের কর্তব্য যথাবিধি তাঁদের ভরণপোষণ করা।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৩৩)
পবিত্র কোরআনে হজরত মুসা (আ.)-এর শৈশবকালীন অবস্থায় মাতৃদুগ্ধ পানের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট স্মরণ করিয়ে দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘মুসা-জননীর অন্তরে আমি ইঙ্গিতে নির্দেশ করলাম যে ‘তুমি শিশুটিকে স্তন্যদান করতে থাকো।’ (সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৭)
মাতৃগর্ভে সন্তানধারণ, প্রসব-পরবর্তী মায়ের বুকের দুধপানের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘জননী সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে গর্ভধারণ করেন এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে।’ (সূরা লুকমান, আয়াত: ১৪) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘সন্তানকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার দুধ ছাড়াতে লাগে ৩০ মাস।’ (সূরা আল-আহকাফ, আয়াত: ১৫)
যে মা নবজাতককে দুধ পান করান, তাঁর জন্য মাহে রমজানের রোজা পালন করার বাধ্যবাধকতা পর্যন্ত শিথিল করে দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা মুসাফির, স্তন্যদানকারিণী ও গর্ভবতী নারী থেকে রমজানের রোজা পালন করার বাধ্যবাধকতা শিথিল করে দিয়েছেন।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ ও নাসাই)
Add Comment