পর্ব ১
প্রতীকী ছবি। আভা
ধনাঢ্য ব্যাবসায়ী আশরাফ চোধুরী এর একমাত্র মেয়ে আভা , ওর বয়স যখন ২ বছর তখন তার মা ক্যান্সারে মারা যায়।
চৌধুরী মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আর বিয়ে করেন নি। বাবার স্নেহে আভা বড় হতে থাকে।
আভা খুব খুব শান্ত আর ভদ্র মেয়ে , ঠিক বাবার মতো। পাড়ার লোকেরা বলতো যেমন আশরাফ চৌধুরী তেমনি উনার মেয়ে।
চৌধুরী সব সময় ব্যবসা বাণিজ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখে আর অবসরে শুধু মেয়েকে সময় দেন।
শত ব্যস্ততার মাঝেও মেয়ের সকল আবদার পুরোন করেন। কোনো কাজে কখনো বাঁধা দেননি , কারন উনি চাননি মা মরা মেয়েটা কষ্ট পাক ।এমনি করে দিন কেটে যায় আভার। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজের করিডরে পা রাখে।
কলেজে আভা নামটি পরিচিত , ওখানে ওর অনেক বন্ধু বান্ধব। কলেজের সমাপনী অনুষ্ঠানে আভা দেশের গান গায় ,
পরের দিন আভার ছবি পত্রিকায় ছাপানো হয়।
চৌধুরী মেয়ের ছবি দেখে আনন্দিত হন আবার একেই সাথে স্ত্রীর কথা ভেবে কষ্টে বুকটা ভারী হয়ে আসে।
পত্রিকা হাতে নিয়ে স্ত্রীর ছবির সামনে গিয়ে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না , অঝোরে কাঁদতে লাগলেন।
এই সময় আভা ঘরে ঢুকলো। বাবা তুমি কাঁদছো , চোধুরী সাহেব বললেন নারে মা ,এ আমার সুখের কান্না ,
দেখ তোর ছবি বের হয়েছে পত্রিকায় , আজ তোর মা থাকলে কতোই না খুশি হতেন। থাক না বাবা , এইসব কথা
আজ চৌধুরী সাহেব বললেন কেন আভাকে গান শিখিয়েছে। তার মায়ের ইচ্ছা ছিল ,
আভা ভালো গান গাবে আর ডাক্তারি পড়াশুনা করবে।
আভা বাবা কে জড়িয়ে ধরে বললো বাবা তুমি দোআ করো যেন আমি মায়ের স্বপ্ন পূর্ণ করতে পারি।
এর পর থেকে আভা টিভিতে নিয়মিত গান গাইতে শুরু করে। ছাত্রী হিসাবে সে খুব ভালো।
পড়াশুনা বন্ধু বান্ধব , গান এইতো আবার জীবন। আভা কখনো মায়ের অভাব বুজতো না ,
বাবার ভালোবাসা পেয়ে। বাবাকে ঘিরে স্বচ্ছ প্রবাহমান আভার জীবন।
পর্ব ২
একদিন আভা তার বান্ধবী ঝর্ণার জন্ম দিনে তার বাড়িতে বেড়াতে যায়। সেখানে সে গান গায় আর অনেক আনন্দের মাঝে কখন যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে সে বুজতেই পারে না। যাক এইবার বিদায় নেবার পালা কিন্তু ঝর্ণার মা কিছুতেই আসতে দেবে না।
আভা বলল আন্টি আমি বাবাকে ছেড়ে কখনো থাকিনি। আমি ফোন করে তোমার বাবা মাকে জানিয়ে দিবো।
আভা বলল আমার মা নেই। তারপর ঝর্ণার মা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে লাগলেন ?
প্রশ্নের পর্ব শেষ হতেই বললেন তোমার বাবার একটা বিয়ে করা দরকার , তুমি তো সারা জীবন থাকবে না। তখন উনি খুব একা হয়ে যাবেন।
আভা কখনো এইভাবে ভাবেনি। আন্টির কথা তার মনের মধ্যে ঘুরপাক করতেছিলো।
কথা গুলি শুনে আভা খুব কষ্ট পেলো , এই প্রথম সে মনে হয় খুব আঘাত পেলো। কথা শেষ হতে ঝর্ণা তাকে এগিয়ে দিতে আসলো।
আভা আন্টির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিলো।
গাড়িতে বসে খুব বিষন্ন দেখে ঝর্ণা ভাবলো ,মা হয়তো ওর মায়ের কথা জিজ্ঞেস করেছে তাই মন খারাপ।
বিষয়টা আসলে তা ছিল না। আভা কখনো তার বাবা কে নিয়ে এইভাবে ভাবে নি। প্রথম ভাবনা টাই তাকে কষ্ট দিয়েই চলেছে।
আর এই ভাবনা থেকেই আভা ধীরে ধীরে বন্ধু বান্ধবের সাথে মেলামেশা কমিয়ে দেয়। ওর মনের মধ্যে এক অপরাধ বোধ , দায়িত্ব বোধ থেকে নিজেকে ধীরে ধীরে গুটিয়ে চলে।
মনে মনে ভাবে বাবা আমার জন্য নিঃসঙ্গ জীবন কাটালো , শুধু আমি ভালো থাকবো এই চিন্তা করে। প্রাণ চাঞ্চল মেয়েটা হটাৎ করে বেশ মিতভাষী হয়ে যায়।
পর্ব ৩
এইদিকে আভার ইন্টারমিডিয়েট ফলাফল প্রকাশ হয়। কলেজেতো বিশাল হৈচৈ পড়ে যায় কারন আভা শুধু প্রথম নয় বোর্ডে প্রথম হয়।
চৌধুরী খুশি প্রকাশ করে হাজার হাজার টাকার মিষ্টি বিতরণ করে। আভা মেডিকেলে ভর্তি হলো।
তবে আগের মতো সবার সাথে মিশে না। একাকীত্বই যেন তার জগৎ হয়ে গেছে। নতুন শিক্ষক,ক্লাশ , নতুন এই পরিবেশের মধ্যে , একজনের সাথে আভা পরিচিত হয়ে উঠে। আরিফ , থার্ড সেমিস্টারে পড়ে।
আরিফ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। ছাত্র অনেক ভালো। আরিফ ভার্সিটিতে সুপরিচিত , একটা নাম।
কারো কোনো সমস্যা হলে , অর্থাৎ পড়াশুনায় কারো কোনো ধরনের সাহায্য লাগলে সবার আগে হাত বাড়িয়ে দেবে আরিফ।
এইভাবে কোনো একদিন আভা আর আরিফের পরিচয়। সম্পর্ক এগুতে থাকে। আভা অনেক গুলি দিন পার করে , কিছু ভালো সময় পার হতে থাকে। কেউ কাউকে কখনো বলে না , ভালোবাসি।
তবে দুজন দুজন কে যে অনেক বেশি পছন্দ করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আরিফ স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে যাবে। আভা ছল ছল চোখে আরিফ কে বিদায় জানায়।
আভা অনেক কিছু বলতে চেয়েও কিছুই বলতে পারে না। এইদিকে আরিফ যাবার সময় একটা নীল খাম আভার হাতে ধরিয়ে দেয়।
” আভা তুমি সেই সুন্দর দিনের অপেক্ষায় থেকো।
আমি ফিরে এসে সেই সুন্দর দিন উপহার দেব।
আমি তোমার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে রচনা করবো একটা স্বর্গ রাজ্য যে রাজ্যের রানী হবে তুমি ”
ইতি
তোমার অভিন্ন হৃদয়
পর্ব ৪
আভার পড়াশুনা শেষের দিকে। একা হয়ে গেলোও সেখানে স্বপ্ন ছিল তাই দিনগুলি খুব ভালো কেটেছে আভার। এখন শুধু প্রতীক্ষা। হটাৎ করে আরিফের সাথে আভার যোগাযোগ নেই।
তবে শেষ কথার একটা কথা ছিল অনেক বিজি। আভা কোনো রকম নেগেটিভ চিন্তা করে না।
সে জানে কত পড়াশুনা করতে হয়। তাছাড়া আরিফ মেধাবী ছেলে চোখে অনেক স্বপ্ন। তাঁর আরো বেশি ব্যস্ত থাকা স্বাভাবিক।
কিন্তু সময় অনেক গড়িয়ে যায় , হিসেবে আসে এতো দিন আরিফ পড়াশুনা শেষ হয়ে দেশে আসার কথা।
পরিবারের চাপ , কাছের বন্ধু বান্ধব সবার একেই কথা বিয়ে কেন করছিস না।
আভা , বাবা কে সব খুলে বলে। এইবার একটু একটু নিঃসজ্ঞতা অনুভব করে।
আরিফের লেখা নীল খামটা দিনে সাত থেকে আট বার পড়ে। মানুষিক ভাবে ভেঙে পড়ে আভা।
শরীর খারাপ অনুভব করে কিন্তু কাউকে কিছু বলে না। প্রচণ্ড মাথা ব্যথা। আভার বাবা যানেন আরিফের সাথে আভার ভালো যোগাযোগ হয়।
বাবা যেন দুঃশ্চিন্তা না করেন তাই আভা বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলেছিলো।
একদিন আভা অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে। মেডিকেলে ভর্তি হতে হয়। চিকিৎসার জন্য যে সুদর্শন ছেলে আসে তা দেখে আভা মৃদু হাসে বলে তুমি।
চোধুরী সাহেব বলে মা তুমি চেনো। আভা বলে হ্যা বাবা আমার কলিক। চৌধুরী একটু দুঃচিন্তা মুক্ত হয়, আর ওদের দুজনের গল্প দেখে উনি বাইরে চলে যান।
পর্ব ৫
আভা বলে কেমন আছো ? উত্তরে আসে ভালো। রিপোর্ট গুলি দেখে কর্তব্য রত ডাক্তার বললেন।
তোমার তেমন কোনো সমস্যা নেই।
অনেক দুঃচিন্তা করো তুমি যার কারনে , খাবারের রুচি কমে গেছিলো।
দিনের পর দিন কম খাওয়াতে শরীরের রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেছে। নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করলে ঠিক হবে।
আভার বাবা কিছু বলার আগেই আভা বললো আজ থেকে আমার সব দুঃচিন্তা শেষ।
আমি আমাকে বুজতে পেরেছি। আমি একটা মোহের মধ্যে ছিলাম , আজ সেটা কেটে গেছে। তুমি ভুল করে তোমার মোবাইল রেখে গিয়েছিলা ।
অনেক বার তোমার মোবাইল বাজতে ছিল।
আমি হাতে নিয়ে বুজতে কষ্ট হয়নি এইটা তোমার অভিন্ন হৃদয় ছিল। বলে সেই নীল খাম টা হাতে ধরিয়ে দিলো। যার ওপর প্রান্তে লেখা ছিল।
“আমার পবিত্র ভালোবাসা এইভাবে ছুড়ে ফেলবে ।
কখনো ভাবতে পারিনি। সুখে থেকো।
আমার নিঃসঙ্গ জীবনের পাশে ক্ষনিকের জন্য দাঁড়িয়ে আর দুঃখ দিওনা। “
Add Comment