হা হা
আমার খুব হাসি পাচ্ছে যান ? তুমি হয়ত ভেবেই নিবা আমি রাগ করে বলছি ,সব ঠিক হয়ে যাবে।
যেমনটা হয়ে আসছে গত ৩০টা বছর। আমি একদম সুস্থ। আমি একেবারেই সুস্থতা থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
অন্তত আমাকে, তুমি আর খুঁজতে এস না। তুমি কেমন থাকবে আমি জানি না।
আমার থাকা নিয়ে তোমার অনুভূতির দরজায় হয়ত কিছুই নাড়া দিবে না। তবুও কিছু কথা বলি তোমায় ,কারণ এটাই আমার শেষ বলা।
যান ?
মনে হচ্ছে আজকের ভোরের নিঃশাসটা আমি অনেক বড় করে নিচ্ছি। আজ সকালের চায়ের স্বাদ একদম ভিন্ন ছিল। কি অদ্ভুত ?
তোমার বাসায় দামি চায়ের কাপের কফিতেও এত মজা কোনদিন ছিল না।
এক চুমুকেই আজ আমি ভিতর থেকে সন্তুষ্ট অনুভব করছি। মাথাটা আজ এত হালকা লাগছে , মনে হচ্ছে নতুন পৃথিবীতে নতুন করে আজ আমার জন্ম হলো।
আজকে বেশ কুয়াশা ছিল কিন্তু তবুও আমি সব স্পষ্ট দেখতে পারছি জান। কখনো এইভাবে নিজেকে দেখাই হয়নি।
ভালোলাগার গল্প থেকেই ,ভালো লাগার অনুভূতি থেকে ,নিজেকে খুঁজে পাবার এক রহস্য থাকে। তুমি তা হয়ত কোনোদিন বুজবানা।
আর এই গল্প কখনোই ছোট হয় না। তাই আমার ভালো লাগার গল্পটা ফুরাতেই চাচ্ছে না।
জান? এখন আমি এখন আমাকে সেলিব্রেট করি। আমি আমাকে কখনো এতো বেশী সুন্দর কখনো দেখিনি। আমার ভিতরে একটা আমি আছে ,আমার ভিতরে একটা আমিত্ব বাস করে ,ওকে আমি মেরে ফেলেছিলাম। আমি ওকে বাঁচাতে চাই। আমি বাঁচিয়ে তুলতে চাই।
ও বাঁচবে আমি জানি। পুনরায় যত্নে আবার ফিরে আসবে।
শব্দ দুইটা তোমার কাছে একদম নতুন। কিন্তু বিশ্বাস কর ,আমার কাছে এত বেশি পুরাতন ,তোমাকে আমি কত বার বলেছি কিন্তু নিঃশব্দে।
তোমার কান পর্যন্ততো পৌঁছায়নি। যে কথায় শব্দ হয় কিন্তু হৃদয় স্পর্শ না করে ,তাহলে নিঃশব্দে কথোপকথন অনেক ভালো তাই না বল ? তুমি খুশি ছিলা আমি সেটা বেশ বুজতে পারছি।
তা প্রকাশ করতেও ভুলোনি অবশ্য।
আমি কৃতজ্ঞ তোমার কাছে। আমার নীরবতা তোমাকে সুখ দিয়েছিলো। আচ্ছা যাক সেই কথা , জান , আমি আমার অস্তিত্বের সব কিছু দিয়েই তোমার সাথে সংসার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হয়ত আমারি আমলের কিছু ত্রুটি ছিল ,তাই তিন যুগেও আমাদের সংসারটা আর হলো না।
শুধুই এতটা বছর আমরা একেই ছাদের নিছে বিছানা ভাগাভাগি করেছিলাম।
প্রথম অনেক কষ্ট হত যান ? দম বন্ধ হবার উপক্রম ছিল। চারিদিকে এতো আলো তবুও আমি অন্ধকার দেখতাম।
সব কিছুই ঝাপসা মনে হত। বারবার চোখ মুছেও কিছুই দেখতাম না।
একদিন বেশ অভিমান নিয়েই খানিকটা বেশ জোর করেই বলছিলাম।
তোমার উত্তর আর পরের প্রতিক্রিয়া দেখে বুজতে শিখেছিলাম , মন বলে আসলে কিছু থাকতে নেই। যদি আমার থেকেই থাকে তাহলে সেইটা আমার অপরাধ।
শরীরের চাহিদা মিটছে এইটাই তো অনেক। মন বলে কিছু আছে তুমি নাকি জানোইনা।
সংসার শুরুর দিকের যুদ্ধটা আমার এটাই ছিল তোমাকে আমি মন চিনাবো।
মায়ায় জড়িয়ে ,ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে একটা ঘর সাজাবো।
তুমি হয়ত কখনো খেয়ালি করোনি। কতদিন অপেক্ষা করেছি ভাতের প্লেট সাজিয়ে। আমার ভাতের প্লেটটা শুখিয়ে যেত।
রান্না করা খাবার গুলি প্রায় বাসি হয়ে যায় ,তোমার বাইরের খাবারের নিয়ম আমি জানতেই পারিনা।
গুছিয়ে রাখা পরিপাটি ঘরটা বারবার এলোমেলো হয়ে যায় , তোমার চোঁখে কোন পার্থক্য আমি দেখি না।
রাতে তোমার স্পর্শের অপেক্ষায় কখন যে চোঁখে ঘুম আসে এইসব ঘটনা অজানাই থেকে যায়।
আমার কেন জানি মনে হয় ,তোমার পেটে ক্ষুদা না থাকলে হয়ত কখন বাসায় বাজারটাও আনতে না।
কিছু কিছু বিষয় আমাকে বেশ অসহায় ভাবতে সাহায্য করে। বাসায় শুয়ে বসে থাকা তোমার সেই নেশাখোর ভাইটারও নাকি হাত খরচের টাকা লাগে। বৃদ্ধ মা , কোমড় বেঁকে হাঁটে, উনারও নাকি ভালোলাগাতে টাকা দিতে হয় নিয়ম করে। বড়লোক ছেলের সাথে বিয়ে হয়ে যাওয়া, সেই বড় বোনেরও নাকি রিক্সা ভাড়া দিয়ে নিয়ে আসতে হয় ,না হলে মনে বড় কষ্ট পায়।
আমিত সবে ২০ বছরের এক তরুণী , সব সম্পর্ক দূরে রেখে তোমার কাছে আসছিলাম। শুধু আমার মন বলেই কিছু আছে ,এটাই তুমি দেখলে না। আমি মানুষ বলেই ভুলেই যাচ্ছিলাম ক্রমান্বয়ে।
আমাকেও খেতেও বলতে হয় ,আমি ক্ষুদার্থ।
আমাকে পরতেও বলতে হয় , কাপড়টা পরার অযোগ্য হয়ে গেছে।
বিশ্বাস করো সংসারের দায়িত্বটা বেশ ভালোবেসেই কাঁধে তুলে নিয়েছিলাম। কিন্তু আমি খেয়াল করলাম আমাকে ক্রমান্বয়ে রোবট ভাবা শুরু করা হলো। আমিও বেশ হাসি মুখেই প্রতিদিনের সকালে ঘুম ভাঙতেই ,নতুন এনার্জি নিয়ে সব কিছুই সুন্দর করে ম্যানেজ করার চেষ্টা করলাম।
খেয়াল করলাম , আমাকে বুঝিয়ে দেওয়া হলো যত এনার্জি দায়িত্বের ভার ততই বেশী।
এবং সব কিছু সমাধান করার জন্য আমি একমাত্র মানুষ।
ভুল করেও ভেবনা এইগুলা সব অভিযোগ করছি।
কখনই ভাববা না আমি রাগ করে চলে যাচ্ছি। বা তোমার দোষ গুলি দেখিয়ে অপরাধী করে চলে যাচ্ছি।
যদি তাই সত্যি হতো তাহলে এই ৩০টা বছর তোমার সাথে থাকতাম না। আসলে আমি নিঃশাস নিয়ে বাঁচতে চাই।
এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটাকে উপভোগ করতে চাই। আমি আমাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
তোমার দেওয়া দামি দামি বাড়ী , সাচ্ছন্দে থাকার জন্য আসবাবের মধ্যে আমি আমাকে হারিয়ে ফেলছিলাম।
Add Comment