মা
মা তোমাকে আজও ধন্যবাদ দেই নাই। কিসের জন্য দিব ? কোন কাজটার জন্য? আমিত খুঁজেই পাই না। আজও ভালোবাসা প্রকাশ করিনি পারিনা , বের হয় না। ঠিক কোনটা কাজটার জন্য প্রকাশ করব আমিত বুজিনা।
জীবনের অর্ধেক সময় পার করেছি তাকে ভুল বুঝে। টিফিনে টাকা দেয় না , নতুন জামা বানিয়ে দেয় না ,
পিকনিকে যেতে দেয় না , খাবার সময়ের মাংসের পিচ্ ইচ্ছা মত খেতে বারন ,
খেলতে গেলে লাঠির মাইর দিয়ে তাড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে আসা।
শুধু না পাওয়ার হিসেব কষেছি অনেকটা বছর।
নিজে যখন নয় মাস কাউকে পেটে ধারণ করলাম , আমি বুজতে শিখলাম মা আসলে কি ? মা হওয়া কি ? মা কি কি করে ? মা যা ভাবে ,মা যা করে ,
মা যা দেয় তা চোঁখে দেখা যায় না। সেখানে শুধুই সন্তানের কল্যাণ থাকে। মায়ের কোন রূপ নেই।
পৃথিবীর সকল মায়ের একেই স্বভাব একেই চরিত্র তার নিজ নিজ সন্তানের জন্য।
আমার মা
তার যুদ্ধটা একদম শুরু থেকেই। বিশাল অর্থের মাঝে বেড়ে উঠা আদরের মেয়ে ,সাত ভাইয়ের দুইটা বোন তারা ,বিয়ে হয় গরিব এক স্কুল মাস্টারের ছেলের সাথে।
বলতে গেলে নুন আন্তে পান্তা ফুরায়। যার বাবার বাড়িতে ৮/১০ মানুষ এমনি খায় (গ্রামের মাতব্বর )
সেখানে আমার মাকে ভাত ভাগ করে খেতে হয়। তাও সেই মাত্র ১৩/১৪ বছর বয়সে।
তারপর আমার বাবা একজন বাবার রূপে যতটা অমায়িক পুরুষ ঠিক একজন স্বামী হিসাবে আমার কাছে ব্যার্থ মনে হয়েছে।
উনি আমাদের যেভাবে খেয়াল রেখেছেন ,সেখানে মাকে একজন শুধুই কর্মী মনে হয়েছে। ভেবেছি হয়ত এইটাই জীবন এখন বুজি , না আমার মা ঠকেছে।
মায়ের কাছে খোলা চিঠি
মা আমার সন্তানের জন্য যেমন আমার কলিজায় আঘাত লাগে , তোমার জন্য অনুভুতিটা তেমন তৈরী হয়নি। কিন্তু আমার সন্তান আমাকে বুজিয়ে দিয়েছে তুমি আমার জীবনের ঠিক আসলে কি ? ধন্যবাদ কয়টা কাজের জন্য দিব,
যে আমাকে সেই ভ্রূণ থেকে দশ মাস পেটে রেখে দুনিয়ায় সকল ঝড় থেকে আগলে রেখেছে।
ভালবাসা ঠিক কোন কাজটার জন্য প্রকাশ করব ? যে আমার জন্মের পর থেকে আজও মাথার উপর ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা বট বৃক্ষের মত।
আমাকে মাফ করে দিও তোমাকে কিছুই দেবার মত সামর্থ আমাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দেন নি কারণ তুমি এতই দামী একটা মানুষ যে দুনিয়ার সকল কিছুই তোমার পায়ের নখেরও যোগ্যতা রাখে না। তুমি শুধুই তুমি মা।
তোমাকে নিয়ে লিখলে আমি একটা বই শেষ করতে পারব কারণ এখন আমার চোঁখে স্পষ্ট ভাবে ভেসে আসে কিছু কিছু স্মৃতি যা আমি ভাবনার শক্তিকে আরো বেশি শক্ত করে খুঁজে পাই।
আব্বা ভীষণ রকম শাষন করতেন। বাড়িতে যে টিভি ছিল সেটাও চাইলেই দেখা সম্ভব ছিল না। কোন সিনেমা নাটক তাঁর অনুমুতি ছাড়া বা তাকে ছাড়া দেখা হতোনা কিন্তু মা আমাদের আবদার মানতে সেই তালাবদ্ধ বাক্সের ভিতরে রাখা টিভি লাঠি দিয়ে গুতো দিয়ে , তালাটা একটা তারের মাধ্যমে খুলে দেখার ব্যবস্থা করতো।
খেলাধুলা করতেও বাড়ীর বাইরে দশ কদম যাওয়া অনেক কঠিন , বাড়ীর ভিতর সামান্য ভালোলাগার জন্য মা কাঁচা বড়ই দিয়ে মার্বেল খেলা , ম্যাচের উপরের কাগজ দিয়ে তাস খেলা , উঠানে হাড়ি পাতিল সব কিছুর জন্য মা ছিল খেলার সাথী।
বাড়িতে আসা চুরি ফিতার সেই আবুল ভাই সপ্তাহে নিয়ম করে আসত মা লুকিয়ে ধান বিক্রি করে কাঁচের চুরি আর লাল ফিতা কিনে দিত। এখন বুজি মায়ের কাছে ইনকামের সোর্চ না থেকেও ছোট খাট এই আবদার পূরণ করা তার জন্য একটা যুদ্ধ জয়ের চেয়েও কম না।
তরুণ বয়সের সেই আবেগ আর বোকামীর গল্পও মা শুনত মনোযোগ দিয়ে। তখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসার সময় মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেই অমুক ভাইয়ের ভালো লাগার অনুভুতিটা ছিল আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে দামী। এখন বুজি এইগুলা শুধুই এক বয়সের তুচ্ছ আবেগ ছাড়া কিছুই না কিন্তু মা সেই কথাও গুরুত্ত দিয়ে শুনত। হাজার কাজের ভীড়ে এইসব আবেগ তার কাছে গুরুত্বহীন থাকলেও আমাকে বুজতে দেয়নি।
মা কনকনে শীতের রাতে চুলাতে লাকড়ী জ্বালিয়ে রমজানে তিনটায় ভাত রান্না করত। প্লেটে ভাত রেডি করেই আমাদের ঘুম ভাঙতে যেত।
আমরা যখন নতুন জামা পড়ি ঈদের দিনে বা কোন বিশেষ দিনে মায়ের বয়স তখন আর কতই হবে নিচ্ছই তার মনটায় চাইত ছেলেমানুষি করতে কিন্তু তা শক্ত করে বেঁধে রাখত এখন তা বুজতে পারি।
এখন বুজি দুনিয়ার হাজার অবহেলায় আর অনেক কিছুই না পাবার ব্যাথায় কষ্টে থেকেও মা কিভাবে হাসত ? এখন বুজি আমাদের একটা ভালো পাত্রস্ত করার জন্য মায়ের দিনের পর দিনে জায়নামাজে বসে আমাদের জন্য দোয়া করা।
এখন অনেক কিছুই বুজি মা কিন্তু এখনো শুধুই চেয়েই দেখি তোমার দেবার বিশাল ভান্ডারটা কেন জানি শেষেই হয় না আর আমি তোমাকে দেবার মতো কিছুই খুঁজে পাইনা। তোমাকে যতই দেখি তোমার সম্পদ ফুরায় না আর আমি আমাকে সেখানে দেখছি একজন মিসকিন আর ফকিরের মত।
মাফ চাই শুধুই মা ,শুধুই মাফ করে দিও
Add Comment